মোরেলগঞ্জে সবজির বাজারে আগুন

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে সবজির দাম বৃদ্ধি হওয়ায় হতাশ ভোক্তারা। গত এক সপ্তাহে সব ধরনের সবজির দামও কেজিতে বেড়েছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা। সাধ্যের মধ্যে সবজি কিনতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিম্নআয়ের মানুষজন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে শীতের সবজি না আসায় দাম তুলনামূলক ভাবে একটু বেশি। তবে শীতকালীন সবজি বাজারে উঠলে দাম কমে যাবে।

এদিকে, চড়া দামে কাঁচা তরিতরকারি কিনতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের।

জানা যায়, বিশ্ব ঐতিহ্য পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ পূর্ব সুন্দরবনের উপকূলীয় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ও আশপাশের এলাকায় মৌসুমী কাঁচামালের উৎপাদন তেমন নেই। আর চাহিদার তুলনায় উৎপাদন না থাকায় মোরেলগঞ্জ পৌর কেন্দ্রীক নিত্যপণ্যের কাঁচা বাজারকে ঘিরে বিগত কয়েক বছরে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট চক্র। খুলনা, যশোরের সাতমাইল, আঠারোমাইল, কেশবপুর, সাতক্ষীরার তালা, শাহাদাতপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মোরেলগঞ্জে আসে সবজি।

শুক্রবার সকালে মোরেলগঞ্জ শহরের সবজির বাজারে ঘুরে দেখা যায়, বেগুন প্রতি কেজি ১০০ টাকা, পেঁপে ৩০, শসা ৮০, আলু ৪৮, সিম ১৬০, পটল ৮০, করলা ৬০, কাকরোল ৮০, উস্তে ৮০, ঝিঙ্গা ৫০, বরবটি ৮০, মিষ্টি কুমড়া ৪০, কাঁচ কলা প্রতি হালি ৩০ টাকা ও কাঁচা মরিচ মানভেদে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস লাউ ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সবজি ক্রেতা রনি বলেন, সপ্তাহ ধরে একই রকম ভাবে বাজারে বাড়তি দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। দাম কমার লক্ষণ দেখছি না। যেখানে এক কেজি সবজি কিনব, সেখানে প্রকারভেদে আধা কেজি ও ২৫০ গ্রাম কিনতে হচ্ছে।

সাধ্যের মধ্যে না থাকায় অনেক ক্রেতা একই ভাবে সবজি কিনে বাড়ি ফিরছেন।

স্থানীয় আরও বেশ কয়েকজন ক্রেতা বলেন, সিন্ডিকেট আড়তদারদের কারণেই এ বাজারে দাম বেশি। আশপাশের বাজারের চেয়ে শহরের প্রধান এ বাজারে সবসময় পণ্যের দাম অনেক বেশি নেয়া হয়। স্বল্প দূরত্বে অন্য কোনো বাজার না থাকায় একান্ত বাধ্য হয়ে এ বাজারে চড়া দামে তরকারি কিনতে এসে নাভিশ্বাস উঠে যায় তাদের।

মোরেলগঞ্জ কাঁচা বাজারে সবজি কিনতে আসা রেজাউল হাওলাদার বলেন, বাজার সহনীয় অবস্থায় নেই। এতো দাম দিয়ে সবজি কিনতে হবে বুঝে উঠতে পারছি না।

এইচ এম আসলাম হোসেন বলেন, বাজার সহনীয় অবস্থায় নেই। এত দাম দিয়ে সবজি কিনতে হবে বুঝে উঠতে পারছি না।

শহিদুল ইসলাম বলেন, আগের তুলনায় প্রতি কেজি সবজি প্রায় ২৫ থেকে ৩৫ টাকা বেশিতে কিনতে হয়েছে। সবমিলিয়ে বলতে গেলে বাজারে সবজির দাম বাড়তিই যাচ্ছে।

সাথী ইসলাম বলেন, সকাল বিকেল নিত্যপণ্যের দাম ওঠা-নামা করে এখানে। সিন্ডেকেটের বেঁধে দেয়া মূল্যে সকল দোকানেই কাঁচামাল বিক্রি হয়। আর বিক্রি না হলে ফেলে দেয়া হয় ড্রেনে। সরবরাহ থাকলেও দাম কমে না।

সবজি বিক্রেতা ইলিয়াছ বলেন, সপ্তাহ ধরে সবজির বাজার একই রকম যাচ্ছে। বাজারভেদে কোনো কোনো সবজির দাম ১৫-২০ টাকা কম-বেশি হয়। পাইকারি বাজার থেকে মাল কেনার পর খাজনা ও পরিবহন খরচ হয়। সে কারণে লাভ রেখে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। তবে শীত মৌসুম না হওয়ায় কিছু কিছু সবজির বাড়তি দাম যাচ্ছে। এর কারণ হলো বাজারে সরবরাহ খুবই কম তাই দাম একটু বাড়তি।

পাইকারি বিক্রেতা আব্দুর রশিদ ফকির বলেন, চাহিদার তুলনায় পণ্য সরবরাহ কম তাই গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে সবজির বাজারে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আগামী মাস থেকে নতুন সবজি আসা শুরু হলে দাম অনেকটা কমে যাবে।

তেল ও চালের দাম স্বাভাবিক থাকলেও মসলা বাজারে জিড়া কেজিপ্রতি এক হাজার ২০ টাকা, সাদা ও কালো এলাচ এবং ডিমের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছু সবজি অতিরিক্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে- এর কারণ হলো উৎপাদন কমে গেছে। আগের তুলনায় সবজি সরবরাহ অনেক কম। আশা করি, এক মাসের মধ্যে শীতকালীন সবজি বাজারে আসা শুরু হলে দাম আগের মতো হয়ে যাবে।

মাংসের বাজারেও দাম বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি, ব্রয়লার মুরগি আকার ভেদে কেজিপ্রতি ১৮৫ টাকা, কক মুরগি ৩২০ টাকা কেজি, রুই মাছ ৫০০ টাকা কেজি, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ মাছ দুই হাজার ২০০ টাকা কেজি আর ৭০০ গ্রাম ওজনের দাম এক হাজার ২০০ টাকা কেজি। এছাড়া, নদীর চিংড়ি আকার ভেদে ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি।

মাছ কিনতে আসা কলেজছাত্র শেখ রাহাতুল ইসলাম জয় বলেন, মাছের বাজারে যেভাবে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এতে করে মাছ কেনা খুবই কষ্টকর।

আর খুচরা বিক্রেতারা বলেন, আড়ত থেকে যে দর দেওয়া হয়, তার চেয়ে সামান্য কিছু লাভে আমরা বিক্রি করে থাকি। দাম বাড়ানো কিংবা কমানোর বিষয়টি আড়ৎদারদের হাতে। তবে মাঝে মধ্যে বাজার মনিটরিংয়ে স্থানীয় প্রশাসন অভিযানে নামে। তখন দু’একজনকে সামান্য জরিমানা ছাড়া তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না।

মোরেলগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, বাজারে কোনো সিন্ডিকেট নেই, সবই উড়ো কথা। তারা পাইকারিতে যে দামে পণ্য কেনেন তার চেয়ে সামান্য বেশি দামে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন।

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, ‘সবজির উৎপাদন কম হচ্ছে বলে দাবি করছেন আড়তদাররা। নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মূল্য তালিকা দেখে অসঙ্গতি থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।